দুনিয়াতে এত লোক, এত গল্প, এত সত্যতা আছে, কিন্তু সকলের জন্য শুধুমাত্র একটাই রাস্তা আছে… সেটা ভালবাসার রাস্তা, যে রাস্তা দিয়ে চলবার জন্য আমরা পৃথিবীতে এসেছি…ভালবাসার জয়যাত্রাতে নটি ধাপ আছে। এটি নৃত্যশিল্পী বৈ-এর কাহিনী।
১। স্বপ্ন: চার অক্ষরের অধরা শব্দ ‘ভালবাসা’ – যা আমাদের পিছনে বাঁকায়, মাথার উপরে দাঁড় করায়, হাস্যস্কর হওয়ায় বা রসাতলে নামায় – বৈ এই ভালবাসা সম্বন্ধে বইতে পড়েছে , অন্যদের থেকে শুনেছে, সিনেমাতে দেখেছে, বাতাসে এর গন্ধ শুঁকেছে, এবার সেও ভালবাসাকে পরখ করতে চেয়েছে।
২। প্রতীক্ষা: যেই মুহূর্তে ভালবাসার স্বপ্নের বীজ তার হৃদয়ে প্রস্ফুটিত হয়েছিল, সে তার আকাঙ্ক্ষা করেছিল, অপেক্ষা করেছিল, কল্পনা করেছিল, এঁকেছিল ও নিজেকে প্রস্তুত করে অধীর আগ্রহে তারজন্য প্রতীক্ষা করেছিল। সে তার প্রাণের বন্ধুকে সর্বদা সর্বত্র খুঁজেছিল নিজের অজান্তে – চাঁদ বা তারার জন্য নয়, ফুল বা বসন্তের জন্য নয়, নিজের বা পরিচিতের জন্য নয়, সে অপেক্ষা করেছিল এক অজানার জন্য…এক পরদেশীর জন্য!
৩। সাক্ষাৎ: সে ভালবাসল এক অপরিচিতকে যাকে তার মনে হল অতি পরিচিত, যে তার স্বপ্নে এসেছিল আর বেরিয়ে গিয়েছিল, যার জন্য তার হৃদয় তৃষ্ণার্ত হয়েছিল, চঞ্চল হয়েছিল, সে কি করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছিল না, সে এক অপরিচিতের প্রেমে পরেছিল!
৪। বাসনা: তার আবেগ জেগে উঠল, জাগতিক মহৎ হয়ে উঠল। সে সর্বত্র প্রত্যক্ষ করল গোলাপি মেঘমালা, রামধনু আর প্রজাপতি, সে এমনকি আলাপ জমাল পুষ্প ও বৃষ্টিবিন্দুর সাথে! সে তার সবকিছু উজাড় করে দিতে চাইল এই অপরিচিতকে, যাকে সে প্রাণভরে বাসনা করেছিল, যার সাথে সে তার সর্বক্ষণ ব্যয় করতে চেয়েছিল, যে দায়ী ছিল তার সবকিছুর জন্য – তার আনন্দ, তার দুঃখ, তার মেজাজ …
৫। আসক্তি: প্রেম এক নেশার মত। প্রথমে বৈ তার প্রেমিক সম্বন্ধে ভেবেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য তারপর বৈ তাকে ভুলে গিয়েছিল কয়েক ঘণ্টার জন্য। বৈ ভেবেছিল যে সে নেশাগ্রস্ত না হয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল। এই অনুভবে অভ্যস্ত হতেই সে বৈ-এর মস্তিষ্ক জুড়ে বসল। কয়েক মুহূর্ত ভুলে থাকার পরিবর্তে, এখন বৈ তার ভাবনায় প্রায় সারা সময় কাটিয়ে দিল। প্রেমিক পাশে না থাকলেও বৈ তার চিন্তায় সারাক্ষণ মগ্ন রইল। যেমন ভাবে নেশাগ্রস্তরা কোন জিনিস পাবার জন্য নিজেদের ক্ষতি করে, বৈ তেমনিভাবে ভালবাসার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত হল। যে ভালবাসে, সে নির্বোধ হয়ে যায়, পাগল হয়ে যায়। প্রেমিকের কল্পনায় বিভোর থেকে, সারা রাত জেগে কামার্ত বৈ তাকে বাতাসে দেখতে পায়, বায়ুমণ্ডলে অনুভব করে। অধীর আগ্রহে বৈ ভাবতে থাকে সে কখন দেখা দেবে! সে বোঝে না যে বিরহ বিচ্ছেদেই প্রেম সুমধুর হয়ে ওঠে!
৬। হতাসা: যেহেতু বৈ আপাদমস্তক প্রেমে ডুবে ছিল, এটা একরকম অনিবার্য ছিল যে কোন না কোন অঘটন ঘটবেই… এটা ছিল তার ভঙ্গুর হৃদয়! বৈ নিজেকে হারাল সেই সঙ্গে হারাল তার প্রেমিককেও। তার মর্মবেদনার টনটনানি অসহনীয় হয়ে উঠল, তার অন্তরে সর্বগ্রাসী দাবানল জ্বলে উঠল।
৭। তমসা: নিজের একাকীত্বের মুখোমুখি হল বৈ। তার হৃদয়ে কামনার আগুণ প্রজ্বলিত রেখে বৈ তার আত্মার অন্ধকার রাত্রি যাপন করল… রাতের সমস্ত রহস্য এবং ডাকিনীবিদ্যা তাকে বিষণ্ণ করল; অন্ধকার থেকে যে কণ্ঠ তার কানে ভেসে এলো তা ছিল দুঃখদায়ক, মাথার উপরে আকাশ ও তারারা তাকে কোন আশার বাণী না শুনিয়ে বরং ঠাট্টা-বিদ্রূপ করল, নির্জনতা তাকে গ্রাস করল। কিন্তু নির্জনতা মোটেই ভয়ঙ্কর নয় কারণ নির্জনতা বা নিঃসঙ্গতা থেকেই জন্ম নেয় কবিতা আর জীবনের নৃত্যবিন্নাস।
৮। শ্রেষ্ঠতা: স্বপ্ন তার নাগালের বাইরে, ঘন ধূসর মেঘ তাকে ঘিরে ফেলল, তবুও বৈ আশা ছাড়ল না, সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে সাগ্রহে সে প্রার্থনা করল, অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন দেখল, অপ্রত্যাশিতকে প্রত্যাশিত করল। বৈ হয়ে উঠল অশোধনীয়, অপরাজেয়, অদমনীয়। মিষ্টি অর্ধ-অন্ধকারের মধ্যে নিজেকে খোঁজার তাগিদে, বৈ অন্ধকার থেকে বেরোনোর পথ হাতড়ানো শুরু করল…কারণ জীবনের উদ্দেশ্য ঝড়ের অপেক্ষা না করে তাকে প্রবাহিত হতে দেওয়া আর বৃষ্টিতে নাচতে শেখা! এই সময়েই বৈ খুঁজে পেল তার সত্যকারের আদর্শ জীবনসঙ্গীকে – স্বয়ং নিজেকে। বৈ জানত যদি সে তার হৃদয়ের ভাষা শিখতে পারত, তাহলে সে অবশেষে নিজেকে বাস্তব জাদুর জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারত।
৯। magicNine (ম্যাজিকনাইন): এই নবম ধাপ…শেষপর্যন্ত যখন পথভ্রষ্ট না হয়ে পূর্ববর্তী আটটি ধাপ সাহসের সাথে পেরিয়ে বৈ তার ভাগ্যের সঙ্গে মুখোমুখি হচ্ছে, সে প্রত্যক্ষ করছে প্রেম যা বিশুদ্ধ, সত্য, নির্দোষ, ঐশ্বরিক, নিঃশর্ত ভালবাসা। কারণ ভালবাসাই আমাদের স্বপ্ন দেখায়, এক মহৎ বাস্তবতায় উন্নীত করে, সত্যের সন্ধান করায়, চরম দূরদর্শিতায় পৌঁছে দেয়। প্রেম অনুপ্রাণিত করে, বাধ্য করে, চালিত করে। প্রেম ভয়কে দূরে সরিয়ে দেয়, অন্ধকার ঘুচিয়ে দেয়। চন্দ্রপ্রভায় সবকিছুই জাদু মনে হয়।
পরে যেও না… ভালবাসায় উঠে দাঁড়াও।
অনুবাদক: ডঃ দীপক কুমার সাহা
একটি নৃত্য প্রদর্শনী, বৈ-এর কাহিনী: ১৭ জানুয়ারি ২0১৭, সন্ধ্যা ৬টা, রবীন্দ্র তীর্থ, কলকাতা ভারত
Wonderful portrayal of this sacred journey
LikeLike
preciosa
LikeLike
preciosa
LikeLike
Very nice
LikeLike
দারুণ লাগলো
LikeLike
Hi
LikeLike